বোহেমিয়ানা কী – কেন - কবে - কোথায়…

একটা প্রশ্ন কিন্তু বেশ যুক্তিযুক্ত এবং প্রাসঙ্গিক, যে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ইন্টারনেটের মতো একটি সর্বগুনসম্পন্ন আয়োজন থাকা সত্ত্বেও আবার একটা আস্ত আলাদা সাইটের কি দরকার। যেকোনও বিষয়ে তথ্য থেকে শুরু করে তার ইতিহাস, ভূগোল মায় হাড়-মজ্জা অবধি সবই তো এখন হাতের মুঠোয়, থুড়ি হাতের মুঠোফোনে। কিন্তু, তবুও তো কিছু থেকে যায়। এই মুঠোফোন আর ডিজিটাল দুনিয়ার বাইরেও যে আর একটা পৃথিবী আছে, যার নাগাল ইন্টারনেটও হয়তো পায়না। চারপাশের এই তুমুল ব্যস্ততা আর তথ্যজালের বিপ্লবের মধ্যেও যা থেকে গেছে চিলেকোঠায় লুকনো মার্বেল গুলি আর জমানো বাসের টিকিটের মতোই। সযত্নে, সংগোপনে। আসলে প্রতিটা মানুষেরই কিছু না কিছু, না বলা গল্প থাকে। তার চারপাশের রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ ছেনে সেই গল্পগুলো তৈরি হয়, আবার হারিয়েও যায় সময়ের দাবী মেনে কালের অন্তরালে। কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে দার্জিলিং মেলের স্লিপার ক্লাসে সাইড লোয়ারে সারা রাত জেগে নিজের সাথে আড্ডা দেওয়া থেকে শুরু করে পুরীর সমুদ্র সৈকতে সদ্য বয়ঃসন্ধি পেরনো কিশোরীর দিকে অপাঙ্গে তাকিয়ে মাথার চুলটা ঠিক করে নেওয়া, এরকম ছোট ছোট মুহূর্ত তো আমাদের জীবনে কম নেই। কিন্তু এই অনু গল্পগুলোর গায়ে সময়ের শ্যাওলা পড়ে যায় পরতে পরতে। গল্প গুলো হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অন্তরালে। হয়তো, হয়তো বা বহু দিন পরে বার্ধক্যে উপনীত হয়ে, হাঁটু ভরা বাত নিয়ে, চশমার কাচ মুছতে মুছতে কখনও কখনও বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ে যায়, শুশুনিয়ায় প্রথমবার রক ক্লাইম্বিং করে টপে উঠে নিজেকে প্রায় তেনজিং নোরগে মনে হওয়ার স্মৃতি। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই বার্ধক্যের দুঃসহ একাকী জীবনে সেই স্মৃতিগুলো ভাগ করে নেওয়ার মতো কেউ থাকে না। কাজেই আমরা গুটিকয় মানুষ চেয়েছিলাম সেই না বলা গল্পগুলো যেন হারিয়ে না যায়। কোথাও অন্তত যেন লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন-নাবিক দের জন্য। আমাদের সেই না বলা কথাগুলো নিয়েই বোহেমিয়ানা। তবে শুধুমাত্র যে মুহূর্তের অনুগল্প নিয়ে আমাদের ডালি, তা কিন্তু নয়। বিদ্যুৎ চমকের মতো অনুঘটনা ছাড়াও, আমাদের জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে নানান অভিজ্ঞতা, স্মৃতি, ভালোলাগা, ভালোবাসা। হনিমুনে গিয়ে প্রথমবার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর নাক ডাকাও কোনও গল্পের বিষয় বস্তু হতে পারে। ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে বসে পামুক পড়তে পড়তে জন্ম নিতে পারে সদ্য ঘুরে আসা তুরস্কের এক অসামান্য ভ্রমণ কাহিনী। হঠাৎ পড়তে বসা কাফকা বা সুকুমার রায় পড়ে মনে হতেই পারে, আরে… এই অভিজ্ঞতাটা সবার সাথে ভাগ করে নিলে কেমন হয়! অনুগল্প থেকে আস্ত ভ্রমণ কাহিনী, ভ্রমণ ধারাবাহিক থেকে বই পড়ার অভিজ্ঞতা, সবকিছুই স্বাগত বোহেমিয়ানায়। শৈশবের আদুরেপনা, কৈশোরের উচ্ছ্বাস, যৌবনের প্রগলভতা, পরিণত বয়সের গাম্ভীর্য এবং বার্ধক্যের স্মৃতি মেদুরতা, সবার জন্যই অবারিত দ্বার আমাদের বোহেমিয়ানায়। স্বাগতম।